সামনেই সরস্বতী পুজো বা বসন্ত পঞ্চমী (Vasant Panchami)। মূলত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য এই পুজো খুবই স্পেশাল। সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন এই বিশেষ দিনটির জন্যে। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যে নামটা খুবই পরিচিত তা হল কুল (Jujube Fruit)। ছোট্ট এই ফল এই পুজোয় বিশেষভাবে দেবীকে উৎসর্গ করা হয়।
পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে মূলত বাজারে কুল পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। বাড়ির বড়রা, ছোটদের বলেন পুজোর আগে কুল খেলে দেবী সরস্বতী খুব রেগে যান। পরীক্ষায় পাশ করা কিংবা ভাল নম্বর পাওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যায়। তবে এর কারণ অনেকেরই অজানা। জানুন এই লোকাচারের আসল কারণ।
টক- মিষ্টি স্বাদের ছোট্ট ফল- কুল প্রায় সকলেরই খুব প্রিয়। কুলের সঙ্গে সরস্বতী পুজোর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা সকলেরই জানা। শুধু ঘরে ঘরে নয় স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠা করে হয় বাগদেবীর আরাধনা। দেবীর সামনে দোয়াতের উপরও একটি নারকেল কুল রাখার নিয়ম রয়েছে। সকাল থেকে উপোস করে অঞ্জলী দিয়ে তার পরেই প্রসাদে কুল খাওয়ার রীতি বহুদিন ধরে।
আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোয় পলাশ ফুল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জানলে অবাক হবেন
শাস্ত্র মতে দেবী সরস্বতীকে তুষ্ট করতে ব্যাসদেব দীর্ঘদিন তপস্যা করেছিলেন। শোনা যায়, সে তপস্যার আগে দেবী সরস্বতী তাঁর তপস্যাস্থলের পাশেই একটি কুল বীজ রেখে একটি শর্ত দিয়েছিলেন। সেই শর্তানুযায়ী বলা ছিল, যতদিন না কুল বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বড় গাছ হবে এবং সেই গাছের ফল পেকে ব্যাসদেবের মাথার উপর পড়বে। ততদিন অবধি দেবীর তপস্যা করতে হবে। তারপরেই দেবী, তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হবেন। সেই শর্তানুযায়ী, ব্যাসদেব তপস্যা শুরু করেন এবং যেদিন গাছের নতুন ফল তাঁর মাথায় পড়ে, তিনি বুঝতে পারেন দেবী তাঁর তপস্যায় তুষ্ঠ হয়েছেন। বিশেষ দিনটি ছিল পঞ্চমী। সেই দিন দেবীকে কুল নিবেদন করে ব্যাসদেব ব্রহ্মসূত্র রচনা আরম্ভ করেছিলেন। সেইজন্যই শ্রীপঞ্চমীর দিনই সরস্বতী দেবীকে নিবেদন করার পর কুল খাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: এবছরই মীনে বক্রী হবে রাহু, ৪ রাশির আর্থিক ক্ষতি সহ একাধিক সংকটের যোগ
সরস্বতী পুজোর আগে কুল না খাওয়ার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রচলিত রীতি। তার মধ্যে কৃষি প্রধান রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। হিন্দু ধর্মে কোনও মরসুমের প্রথম ফলই দেবতাদের উৎসর্গ করে খাওয়ার রীতি রয়েছে। পৌষ-মাঘ এই সময়টাতে বাজারে খুব সহজে এবং ভাল বিভিন্ন রকমের কুল মেলে। আর সেই সময়ই পঞ্চমী তিথিতে হয় সরস্বতী পুজো। তাই বসন্ত পঞ্চমীতেই উৎসর্গ করে তা প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার রীতি।
আরও পড়ুন: স্বপ্নে মা কালীকে দেখা শুভ না অশুভ ইঙ্গিত? স্বপ্ন শাস্ত্র বলছে...
প্রচলিত এই লোকাচারের পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। বসন্তকালে বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয় চারিদিকে। সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটের সমস্যা এই সময়ে ঘরে ঘরে লেগে থাকে। আধ পাকা বা কাঁচা কুল বসন্তকালে খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও এই ফল মারাত্মক টক হয় যা দাঁতের জন্যে ক্ষতিকারক। তাই এটি খাওয়ার নিয়ম নেই সেই সময়ে।
এছাড়াও শাস্ত্রে বলা রয়েছে, 'বার্তাকু কার্তিককে বর্জ্যং মূলং বা বদরং মাঘে। চৈত্রে শিম্বী পুনস্তুম্বী ভাদ্রে বর্জ্যং দ্বিজাতিভিঃ।' যার অর্থ, দ্বিজাতিগণ কার্তিক মাসে বেগুন, মাঘ মাসে মুলো বা কুল, চৈত্রে শিম এবং ভাদ্র মাসে গোলাকার লাউ খাবেন না।
আরও পড়ুন: রটন্তী কালী পুজোর বিশেষ তিথিতে মায়ের আরাধনায় মনোবাঞ্ছা পূর্ণ ও দাম্পত্য কলহ দূর হয়
যে কোনও লোকাচার বা শাস্ত্রের নিয়ম ছোটরা বোঝে না বা মানে না। তাই বাড়ির বড়রা তাদের ভয় দেখান এই বলে যে, সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না। তাই সকলে অধীর ভাবে অপেক্ষা করে সরস্বতী পুজোর, যাতে নারকেল, টোপা ইত্যাদি ভিন্ন রকমারী কুলের স্বাদ তারা নিতে পারে।
সরস্বতী পুজো ২০২৩-এর তারিখ (Saraswati Puja 2023 Date)
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি এবং বাংলায় ১১ মাঘ, বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজো পড়েছে।
সরস্বতী পুজো ২০২৩-এর পঞ্চমী তিথি (Saraswati Puja 2023 Panchami Tithi)
২৫ জানুয়ারি রাত ৬/২০/১১ থেকে ২৬ জানুয়ারি বিকেল ৪/৩৮/৫৩ মিনিট পর্যন্ত থাকবে পঞ্চমী তিথি।